"জয়া-মিথিলাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়ানোর হুমকি স্বর্ণালী সরকারের!"

"জয়া-মিথিলাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়ানোর হুমকি স্বর্ণালী সরকারের!"

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৭:২২ ৫ মে ২০২৫

সম্প্রতি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’-এর এক উপস্থাপিকা স্বর্ণালী সরকার কর্তৃক দেওয়া বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে “ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া উচিত” — এমন কটূ মন্তব্য করে তিনি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছেন।

ওই ভিডিওতে স্বর্ণালী সরকার রীতিমতো আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, “প্রতিবেশী দেশ থেকে যারা ভারতে এসে বসবাস করছেন, কাজ করছেন, খ্যাতি অর্জন করছেন—তাদের অনেকেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরও চুপ করে রয়েছেন। আমাদের দেশের ট্যাক্সের টাকায় উপকৃত হয়ে তারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে ব্যস্ত, অথচ তাদের নিজ দেশের অসঙ্গতি নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করছেন না।”

তিনি সরাসরি অভিযোগ তোলেন যে, বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীদের ভারতে কাজ করার ফলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক স্থানীয় ও প্রতিভাবান শিল্পী কাজ হারাচ্ছেন বা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে বহরমপুর, মালদা, দুর্গাপুর ও মুর্শিদাবাদ এলাকার শিল্পীদের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, তাদের প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তারা বারবার উপেক্ষিত হচ্ছেন।

বক্তব্যের একপর্যায়ে স্বর্ণালী সরকার সরাসরি দুই বাংলার জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রী জয়া আহসান ও রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা-র নাম উল্লেখ করেন।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “তারা কেন নীরব? তারা কি বাংলাদেশের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডকে নীরবে সমর্থন দিচ্ছেন? এই নীরবতা কি শুধুই সুবিধা নেওয়ার কৌশল নয়?”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কার্যত অভিযোগ তোলেন, এই শিল্পীরা ভারতে এসে শুধু পেশাগত সুবিধা নিচ্ছেন, কিন্তু যখন বাংলাদেশের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন তারা মুখ খুলছেন না।


এই বক্তব্য দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়লে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় আলোচনা, সমালোচনা ও তীব্র নিন্দা। বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব স্বর্ণালীর এই বক্তব্যকে "উসকানিমূলক", "বর্ণবাদী", "ঘৃণাত্মক", ও "সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের বিরুদ্ধে" বলে আখ্যা দিয়েছেন।

বিশিষ্ট ভারতীয় নাট্যব্যক্তিত্ব ও সমালোচক শুভদীপ মিত্র বলেন, “বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির বন্ধন যুগের পর যুগ ধরে রয়েছে। শিল্পীদের মধ্যে কোনো জাতীয়তা ভিত্তিক বিভাজন তৈরি করা আত্মঘাতী।”

এই ঘটনার মাধ্যমে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে—রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে কি দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সহাবস্থান ভেঙে পড়ছে?
বিশেষ করে বাংলাদেশের গুণী অভিনয়শিল্পীরা পশ্চিমবঙ্গে এসে যে সফলতা পেয়েছেন, তা অনেকের কাছেই দুই বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির মেলবন্ধনের অনন্য উদাহরণ। এই ধারা দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষকেই সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি যে ভাষ্যগুলো উঠে আসছে, তা সেই বন্ধনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বিজ্ঞাপন