বুধবার , ০৭ মে, ২০২৫ | ২৪ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:১৭ ৭ মে ২০২৫
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, ২০২৫ সালে এসে সেই আশঙ্কাই যেন বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীর সীমান্তে বারবার সংঘর্ষ, বিমান সীমারেখা লঙ্ঘন এবং পারস্পরিক হুমকি-ধামকির ফলে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
ওই গবেষণায় বলা হয়েছিল, কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এমন যুদ্ধের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণহানি হতে পারে অন্তত সাড়ে ১২ কোটি মানুষের। এর পাশাপাশি, পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া ও বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনে বিশ্বজুড়ে দেখা দিতে পারে চরম জলবায়ু সংকট ও খাদ্য ঘাটতি, যা অনাহারে আরও কোটি কোটি মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
গবেষণাটিতে যুদ্ধ শুরুর কয়েকটি ‘দৃশ্য-কল্প’ও তুলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলা, সীমান্তে অনিয়ন্ত্রিত সংঘর্ষ কিংবা কাশ্মীরকে ঘিরে সামরিক উত্তেজনা। আজ ২০২৫ সালে এসে আমরা সেইসব দৃশ্যকল্পের বাস্তব প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এতটাই নাজুক যে, সামান্য একটি ভুল বোঝাবুঝি বা দুর্ঘটনাও গড়াতে পারে সর্বনাশা যুদ্ধের দিকে। এমনকি সীমান্তে একটি অনিচ্ছাকৃত গুলিবর্ষণ কিংবা বিমান অনুপ্রবেশ থেকে শুরু হতে পারে এক ভয়াবহ বিপর্যয়, যা থামানো তখন আর সম্ভব হবে না।
পরমাণু বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাই এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন যে, পারমাণবিক অস্ত্র থাকাকালীন উত্তেজনা কোনো অবস্থাতেই স্বাভাবিক যুদ্ধের সীমায় থাকে না। এটি দ্রুতই পরিণত হতে পারে এক সর্বগ্রাসী সংঘাতে।
যখন বিশ্বজুড়ে শান্তি ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আহ্বান উঠছে, তখন ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব যেন সেই প্রচেষ্টার ওপর এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালের গবেষণা আজ যেন এক জাগ্রত সতর্কবার্তা—যদি দুই দেশ সময়মতো সংযম ও সংলাপকে গুরুত্ব না দেয়, তবে দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বকে হয়তো এক অপূরণীয় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।
বিজ্ঞাপন