যুদ্ধ নয়, এবার শান্তির পথে: যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিল ভারত-পাকিস্তান

যুদ্ধ নয়, এবার শান্তির পথে: যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিল ভারত-পাকিস্তান

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৪:৫৭ ১০ মে ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল। সীমান্তে টানা গোলাগুলি, পাল্টা হামলা, এবং সেনা মৃত্যুর খবরে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ভয়ের সঞ্চার। সেই রক্তাক্ত পরিস্থিতির মধ্যেই অবশেষে আসে এক আশার আলো—যুদ্ধ নয়, এবার দুই দেশ একসঙ্গে ঘোষণা করল যুদ্ধবিরতির।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার শনিবার (১০ মে) এক বিবৃতিতে জানান, “পাকিস্তান ও ভারত তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।” তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত একদিনে আসেনি। এর পেছনে ছিল দীর্ঘ এক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক চাপ। বিশেষ করে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ভূমিকা এই সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইসহাক দার আরও বলেন, “আমরা সবসময়ই আঞ্চলিক শান্তির পক্ষে ছিলাম, তবে তা কখনোই আমাদের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে নয়। পাকিস্তান শান্তি চায়, কিন্তু মাথা নিচু করে নয়।”

অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক বিবৃতিতে জানান, “ভারত ও পাকিস্তান আজ গুলিবর্ষণ ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছেছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় ও আপোষহীন অবস্থানে অটল রয়েছে এবং তা বজায় থাকবে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্র জানান, দুই দেশের সেনাবাহিনীর প্রধানরা (ডিজিএমও) একমত হয়েছেন যে, শনিবার বিকেল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে সব ধরনের গুলিবর্ষণ এবং সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশনা উভয় দেশের বাহিনীকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সাধারণ জ্ঞান এবং দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার—এটাই প্রকৃত কূটনীতি।”

এই শান্তির খবরে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন হাজারো সাধারণ মানুষ। যাদের দিন কাটছিল আতঙ্কে—বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ, রাতে বাতি নিভিয়ে রাখা, ঘর ছেড়ে পালানোর প্রস্তুতি—তারা আজ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। একদিকে যেমন পরিবার বাঁচল যুদ্ধের ভয়াল ছায়া থেকে, অন্যদিকে এই যুদ্ধবিরতির ফলে নতুন করে শান্তির সুযোগ তৈরি হলো।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই শান্তির ঘোষণা কতদিন স্থায়ী হবে? ইতিহাস বলে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বরাবরই স্পর্শকাতর। তাই এই যুদ্ধবিরতি যেন শুধুই সাময়িক না হয়, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় চাওয়া।

বিজ্ঞাপন