মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল!

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল!

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৭:৩৬ ২১ মে ২০২৫

ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে— এমন তথ্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে জানিয়েছেন, তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চলতে থাকলেও ইসরায়েলের সামরিক প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নজরে এসেছে।

কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েল চূড়ান্তভাবে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এমনকি ইসরায়েল আদৌ হামলা চালাবে কি না, সেই বিষয়েও নিশ্চিত নয় ওয়াশিংটন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের এক সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ইউরেনিয়াম অপসারণ চুক্তি না হয়, তাহলে এই সম্ভাবনা আরও বাড়বে।”

জানা গেছে, ইসরায়েলের উচ্চপর্যায়ের সামরিক তৎপরতা, ব্যক্তিগত ও সরকারি পর্যায়ের বার্তা আদান-প্রদান এবং বিমান মহড়া সহ একাধিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে এ তথ্য তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা। বিমান মহড়া এবং আকাশপথে গোলাবারুদ সরানোর কার্যক্রম ইসরায়েলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এসব পদক্ষেপ হয়তো সরাসরি হামলার উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে না, বরং ইরানকে কূটনৈতিকভাবে চাপে ফেলতেই এই কৌশল হতে পারে। ইরান যেন পারমাণবিক কর্মসূচির কিছু অংশ থেকে সরে আসে, সেই লক্ষ্যেই হতে পারে এ প্রস্তুতি।

এ বিষয়ে সিএনএন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের বক্তব্য জানতে চাইলেও তারা সাড়া দেয়নি।

এক মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইসরায়েল মনে করছে ইরানের সামরিক সক্ষমতা বর্তমানে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। গত অক্টোবরেই ইসরায়েল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হেনেছিল। তাছাড়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, আঞ্চলিক মিত্র হারানো এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ইরানকে আরও দুর্বল করে তুলেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা।

এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে, যাতে ইসরায়েল যদি আক্রমণ চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনমতো সমর্থন দিতে পারে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরান যদি বড় ধরনের কোনো উস্কানি না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এখনই ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলায় সরাসরি অংশ নেবে না।

আরেকটি মার্কিন সূত্র জানায়, “যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারবে না।”

তবে এক ইসরায়েলি সূত্রের দাবি, “যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যেকোনো চুক্তিকে ইসরায়েল ‘খারাপ চুক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করে, তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়াও হামলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।”

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে আলোচনা কার্যত অচল। ওয়াশিংটনের বার্তা হচ্ছে, চুক্তিতে ইরান যেন ১ শতাংশও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে না পারে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, “আমরা ইরানকে এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছি যা তাদের অসম্মান না করেই একটি কার্যকর সমাধান দিতে পারে।”

অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বক্তব্যে বলেন, “ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে দাবি করেছে তা বড় ভুল। আমি মনে করি না এই বিষয়ে আলোচনায় কোনো ফল আসবে।”

বিজ্ঞাপন