বুধবার , ০৭ মে, ২০২৫ | ২৪ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৮:৪১ ৫ মে ২০২৫
চট্টগ্রামের আলোচিত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় এবার আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হলো বিতর্কিত সংগঠক ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাবন্দি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। সোমবার (৫ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন এই আদেশ দেন। মামলার তদন্ত সংস্থা কোতোয়ালি থানা পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত শুনানি শেষে এই নির্দেশ দেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বর্তমানে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাভোগ করছেন। নিরাপত্তা বিবেচনায় তাকে আদালতে হাজির না করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানিতে যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন,
"আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় তদন্তে চিন্ময়ের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। আদালত শুনানি শেষে তা মঞ্জুর করেন।"
চিন্ময়ের বিরুদ্ধে চারটি মামলা
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মোট চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার মামলা।
অন্য তিনটি মামলার মধ্যে রয়েছে—
পুলিশের ওপর হামলা,
আদালত প্রাঙ্গণে সহিংসতা সৃষ্টি,
বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ।
আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলার শুনানি সোমবার ভার্চুয়াল আদালতে অনুষ্ঠিত হয়। বাকি তিন মামলার শুনানি হবে মঙ্গলবার।
গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ‘ইসকন’ এর বহিষ্কৃত সংগঠক এবং বিতর্কিত সংগঠন ‘সনাতনী জাগরণ জোট’-এর মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত।
গ্রেপ্তারের পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ রায় ঘোষণার পরই আদালত প্রাঙ্গণে ভয়াবহ সহিংসতার সৃষ্টি হয়। চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান অবরুদ্ধ করে রাখে দীর্ঘ সময়।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও বিজিবি যৌথভাবে লাঠিচার্জ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।
সেই সহিংসতায় আইনজীবী খুন
চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে সহিংসতার মাঝেই—চট্টগ্রাম আদালত এলাকার বাইরে, লালদিঘী পাড়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে।
আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও অনেককে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তে উঠে আসে, চিন্ময়ের অনুসারীরাই হামলা চালিয়েছিল।
জামিন স্থগিতের নাটকীয়তা
ঘটনার পর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময়ের জামিন আদেশ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মঞ্জুর হলেও তা নাটকীয়ভাবে স্থগিত করা হয় উচ্চতর আদালতের নির্দেশে। ফলে বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন এবং বিভিন্ন মামলায় একে একে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
আইনজীবী মহলে এই হত্যাকাণ্ড এবং চিন্ময়ের অনুসারীদের সহিংস তাণ্ডব নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। চট্টগ্রামের আইনজীবীরা ইতোমধ্যে চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযোগ গঠন ও বিচার কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন