শুক্রবার , ৩০ মে, ২০২৫ | ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:১৬ ২৭ মে ২০২৫
বাংলাদেশের অপরাধ জগতের ইতিহাসে একটি ভয়ংকর নাম হলো সুব্রত বাইন। হত্যা, অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের মতো অপরাধে তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৫টিরও বেশি মামলা। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে সে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নৃশংস অপরাধ চালিয়ে বেড়িয়েছে। ২০০৪ সালের পর সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকে।
তবে অবশেষে দীর্ঘদিন পলাতক থাকা এই কুখ্যাত অপরাধীকে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস ও কৌশলী অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ২৭ মে, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার কালীশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা মসজিদের পাশের একটি বাড়ি থেকে সেনাবাহিনী তাকে তার এক সহযোগীসহ আটক করে।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোর ৫টা থেকে শুরু হয় এই অভিযান, যা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনীর সশস্ত্র ইউনিট, এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বাড়িটি নজরদারির মধ্যে আনা হয়। অভিযানে ব্যবহৃত হয় আধুনিক প্রযুক্তি—ড্রোন, নাইট ভিশন ক্যামেরা এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিউনিকেশন ডিভাইস।
জানা গেছে, সুব্রত বাইন ২০০৪ সালের পর ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে ভুয়া পরিচয়ে আত্মগোপনে ছিল। ২০২৩ সালের শেষদিকে সে আবার বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং ছদ্মবেশে কুষ্টিয়ায় আশ্রয় নেয়। একাধিকবার সে স্থান পরিবর্তন করেও গা-ঢাকা দিয়ে ছিল, কিন্তু সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা নজর এড়াতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এরপর জানা যায়, এই এলাকায় ভয়ংকর এক সন্ত্রাসী আত্মগোপনে রয়েছে।
অভিযানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো ইউনিট ও ইন্টেলিজেন্স শাখার সমন্বয় ছিল অত্যন্ত সফল। কোনো প্রকার গুলি বিনিময় ছাড়াই সুব্রত বাইনকে আটক করা সম্ভব হয়। এরপর তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তার সহযোগীকে র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, সুব্রত বাইন শুধু একজন সন্ত্রাসী নন—তিনি ছিলেন একটি বড় অপরাধ চক্রের সংগঠক ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে গড়ে ওঠা সহিংস গোষ্ঠীর মূল কৌশলকারী। তার গ্রেফতার দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য এবং ভবিষ্যতে অপরাধ চক্র ভাঙার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, অর্থপাচার ও রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও অনুসন্ধান চলছে। দেশবাসী আশাবাদী যে, সুব্রত বাইনের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে দেশের অপরাধ জগতের এক ভয়ংকর অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে।
বিজ্ঞাপন