বৃহস্পতিবার , ০৮ মে, ২০২৫ | ২৫ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৫:২৪ ৮ মে ২০২৫
স্মার্টফোন কিনে না দেওয়ায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ইয়ামিন (১৫) নামের এক কিশোর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বুধবার (৭ মে) সন্ধ্যায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের গুয়াবাড়ী গুচ্ছগ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ইয়ামিন ছিলেন আব্দুল হাকিম ও সকিনা বেগম দম্পতির সন্তান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইয়ামিন গত কয়েকদিন ধরে তার মায়ের কাছে একটি স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করছিল। কিন্তু তার মা সকিনা বেগম একজন পাথর শ্রমিক, যার পক্ষে সন্তানের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব ছিল না। পরিবারের আর্থিক দৈন্যতা এতটাই প্রকট যে প্রতিদিনের আহার জোটাতেও কষ্ট হয়।
বুধবারও ইয়ামিন তার মায়ের কাছে ফোন চেয়ে কান্নাকাটি করে। কিন্তু তার মা অসহায়ভাবে কিছুই করতে পারেননি। সন্ধ্যার দিকে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করেন। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে যায়, ইয়ামিনের নিথর দেহ ফাঁসিতে ঝুলছে। সাথে সাথে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুসা মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি একটি অপমৃত্যুর ঘটনা হিসেবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী জানান, “নিহতের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারা মরদেহ বুঝে পাওয়ার আবেদন করেছে। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় রয়েছে।”
ইয়ামিনের মা কাঁদতে কাঁদতে জানান, “সে কিছুদিন ধরে টাচ ফোন চাইছিল। কিন্তু মোবাইল কেনার মতো টাকা কোথায় পাব? পাথরের কাজ করে খেয়েদেয়ে চলাই কষ্ট। আমি তো ঘরে ছিলাম না, বাইরে কাজ করছিলাম... ঘরের দরজা বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করেও যখন কোনো সাড়া পাইনি, তখন জানালা দিয়ে দেখি...”
এই করুণ ঘটনার পেছনে উঠে এসেছে এক জ্বলন্ত সামাজিক বাস্তবতা—অর্থনৈতিক অনটন ও প্রযুক্তি আসক্তির তীব্র চাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য, পরিবারে সচেতনতা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা এবং সামাজিক মূল্যবোধের এই চরম বিচ্যুতি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
স্থানীয়রা ও সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রযুক্তির সুবিধা যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি এর অপব্যবহার ও অতিরিক্ত চাহিদাও ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। পারিবারিক বন্ধন ও মানসিক সাপোর্টের অভাবে এই বয়সের ছেলেমেয়েরা অনেক সময় চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
খাদেমুল ইসলাম/এম এন পি
বিজ্ঞাপন