রবিবার , ০৪ মে, ২০২৫ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:০৯ ৩ মে ২০২৫
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন উর রশীদের নামে এক সময় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত ছিল ‘ভাতের হোটেল’। রাজনৈতিক নেতা, সেলিব্রিটি, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ সেখানে খেতে যেতেন হারুনের সঙ্গে। কিন্তু সেই ‘ভাতের হোটেল’কে ঘিরেই আজ দেশজুড়ে চাঞ্চল্য—সেই হোটেল আসলে ছিল এক ‘গুপ্তধনের রাজ্য’!
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, হারুন উর রশীদ ও তার পরিবারের নামে রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত কোটি টাকার সম্পদ। রাজধানীর উত্তরা থেকে শুরু করে সাভার, গাজীপুর, টেকনাফ, খাগড়াছড়ি, এমনকি বনানীতেও রয়েছে তার নামে জমি-বাড়ি-ব্যবসা।
তিনটি দুর্নীতির মামলা, মূল অভিযোগে ৪১ কোটি টাকা—তদন্তে বেরিয়ে এলো হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য!
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন হারুন। এরপর দুদক তার, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার এবং ভাই এবিএম শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করে।
হারুনের নামে: ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা
স্ত্রী শিরিনের নামে: ১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা
ভাই শাহরিয়ারের নামে: ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা
কিন্তু অনুসন্ধান যত গভীরে যাচ্ছে, বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুদকের তদন্তকারীদের দাবি, এই পরিবারের সম্পদের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
শুধু উত্তরাতেই ১৮টির বেশি সম্পত্তি, ৮০ কোটির মার্কেট, ৩০ কোটির বাড়ি!
উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়ি ‘হা-মীম’ ছিল হারুনের মালিকানাধীন। ৪০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয় ব্যবসায়ী গোলাম হাসনাইন হিরনের কাছে—যিনি হারুনের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
উল্লেখযোগ্য কিছু সম্পত্তি:
৮ তলা বাড়ি (মূল্য: আনুমানিক ৩০ কোটি টাকা)
১০ তলা মার্কেট (মূল্য: আনুমানিক ৮০ কোটি টাকা)
উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরে কমপক্ষে ১৮টি জমি ও স্থাপনা
১৩, ১৪, ১৫ নম্বর সেক্টরে শোরুম, ফ্ল্যাট ও নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক ভবন
এছাড়া উত্তরার জমজম টাওয়ারের পাশে ও অন্যান্য এলাকায় রয়েছে তার মালিকানাধীন বহু ফ্ল্যাট ও প্লট।
রাজধানীর বাইরেও দুর্নীতির বিস্তার—রিসোর্ট, ফ্যাক্টরি, জমি, শেয়ার!
রাজধানীর বাইরের সম্পদের তালিকাও কম নয়।
গাজীপুর: সবুজপাতা রিসোর্ট
সাভার: নন্দন পার্কে শেয়ার
নিকুঞ্জ: ট্রাভেল এজেন্সি
টঙ্গী: অনুমোদনহীন জেএক্স জিওটেক্স ফ্যাক্টরি
আশুলিয়া: ছায়াকুঞ্জ প্রকল্পে নির্মাণাধীন রিসোর্ট
বনানী: ২০ কাঠার জমি ৭০ কোটিতে বিক্রি
টেকনাফ: মেরিন ড্রাইভে রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা
সম্পত্তি জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ—আদালতের একের পর এক নির্দেশ
দুদক সূত্র জানায়, হারুন ও তার পরিবারের সম্পদ গোপনে বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছিল। ফলে জরুরি ভিত্তিতে আদালতের আদেশে জব্দ করা হয়েছে:
পাঁচটি ভবন, দুটি ফ্ল্যাট
১০০ বিঘা জমি
১০টি ব্যাংক হিসাব (১.২৬ কোটি টাকা)
স্ত্রী ও ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির শেয়ার
তদন্ত চলছে, ধরা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার?
ডিবির আলোচিত সেই কর্মকর্তা এখন হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির হোতা হিসেবে পরিচিত। সামাজিক মাধ্যম কাঁপানো ‘ভাতের হোটেল’-এর আড়ালে তৈরি হওয়া এই সম্পদের জগত এখন দুদক ও প্রশাসনের নজরে।
দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন কি না হারুন উর রশীদ—নাকি এই গুপ্তধনের গল্প পরিণত হয় আরও দীর্ঘ এক নাটকে।
বিজ্ঞাপন