অপরাধ জগতের ইতিহাসে একটি ভয়ংকর নাম: সুব্রত বাইন—জন্ম, উত্থান ও পতনের অজানা অধ্যায়

অপরাধ জগতের ইতিহাসে একটি ভয়ংকর নাম: সুব্রত বাইন—জন্ম, উত্থান ও পতনের অজানা অধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৭:৪৮ ২৭ মে ২০২৫

নব্বইয়ের দশকে ঢাকার অপরাধ জগতের এক আলোচিত ও ভয়ংকর নাম ছিল সুব্রত বাইন, যিনি ওরফে ফতেহ আলী নামে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া সুব্রত বাইন বরিশালের আগৈলঝাড়ার জোবারপাড় গ্রামের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই তার পরিবার মগবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন যেখানে মা ও তিন বোনকে নিয়ে তিনি পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। শিক্ষাজীবনে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন স্কুল থেকে শুরু করে ঢাকার শেরেবাংলা স্কুলে এসএসসি পাস করেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন সুব্রত। সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং সেই সূত্র ধরেই অস্ত্র হাতে নিয়ে অপরাধের পথে পা বাড়ান।

১৯৯৩ সালে মধুবাজারের এক সবজিবিক্রেতার খুনের ঘটনায় পুলিশের নজরে আসেন তিনি। এরপর মগবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও দরপত্র নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্রুত অপরাধজগতে তাঁর আধিপত্য বিস্তার ঘটে। মগবাজার, রমনা, কারওয়ান বাজার, মধুবাগসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল সুব্রত বাইনের দখলে। এক সময় তিনি ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা পান। রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির হয়ে কাজ করেন এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হন। এই রাজনৈতিক প্রভাব তাকে ‘তারকা সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়। যুবলীগের লিয়াকতের সঙ্গে মগবাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

২০০১ সালে ইন্টারপোল তার নামে নোটিশ জারি করে, যা আজও কার্যকর রয়েছে। এরপর তিনি কলকাতা পলাতক হন এবং সেখানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকেন। ২০০৮ ও ২০১২ সালে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সুব্রত, কিন্তু পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। নেপালেও তার গ্রেপ্তারের ঘটনা রয়েছে।

ঢাকায় সম্প্রতি হাতিরঝিল ও গুলশান এলাকায় সংঘটিত তিনটি খুনের ঘটনায় তার নাম সংশ্লিষ্ট হিসেবে উঠে এসেছে। ২১ এপ্রিল হাতিরঝিলে যুবদল নেতা আরিফ সরদরের হত্যায় তাঁর অনুসারীদের হাত থাকার খবর পাওয়া গেছে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আসা ও তা ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, জমি ও ফ্ল্যাট দখলসহ নানা অপরাধে জড়িত। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে অপরাধের জগতে পুনরায় সক্রিয় হন।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, তার সহযোগীরা মগবাজারে দেড় মাস আগে ভাড়া নেওয়া বাসায় থেকে পোশাক ব্যবসার আড়ালে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল। এছাড়া ভারতের সীমান্ত থেকে অস্ত্র এনে ঢাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সে ও তার বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

সুব্রত বাইনের অপরাধজীবন ও রাজনৈতিক কৌশল তাকে দেশের অপরাধ ইতিহাসে একটি ভয়ংকর অধ্যায় হিসেবে গড়ে তুলেছে। তার জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত যে অপরাধ কখনো স্থায়ী নয়, এবং আইনের আওতায় আসাই শেষ গন্তব্য।
 

বিজ্ঞাপন