শনিবার , ৩১ মে, ২০২৫ | ১৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৫:১১ ২৯ মে ২০২৫
দেশের বিভিন্ন জেলার মতো রাজধানী ঢাকাতেও আজ সারাদিন সূর্যের কোনো দেখা মেলেনি। সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি এখনো অবধি থামেনি। শুরুর দিকে বৃষ্টি ছিল হালকা থেকে মাঝারি, কিন্তু বিকালে তা প্রবল বর্ষণে পরিণত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, যা ঘরমুখো অফিসজীবীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, নিউমার্কেট ২ নং গেট, চন্দ্রিমা মার্কেট, হকার্স মার্কেট, আজিমপুর, বাংলামোটরসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় পানি জমে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল এবং দুপুরের পর থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান এলাকা হাঁটু পানি দিয়ে ঢেকে গেছে। ধানমন্ডি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, মালিবাগ, রামপুরা, মগবাজার, গুলশান, বনানী, উত্তরা, শান্তিনগর, কারওয়ান বাজার, পুরান ঢাকা—সহ প্রায় সব জায়গায় এই সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে।
হকার্স মার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটের নিচে পানি হাঁটু পর্যন্ত উঠে গেছে, যার কারণে দোকান ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। হকার্স মার্কেটের আসমা শাড়ির মালিক মো: সাজিদ জানান, “প্রতিবার বৃষ্টির পানি জমে আমাদের ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়। এর কোনো কার্যকর সমাধান হয় না, শুধু আশ্বাস দেয়া হয়। আজ সারাদিন কোনো ব্যবসাই হয়নি, সামনে ইদ আসছে, কিন্তু পরিস্থিতি দেখে কেউ কিনতে আসছে না।”
পথচারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও করুণ। মুত্তাকিম আহমেদ বলেন, “পানি ও কাদা পেরিয়ে বাসায় যেতে হচ্ছে, জুতা হাতে নিতে হচ্ছে। রাস্তায় খানাখন্দ থাকায় ফসকে পড়ার ভয়ে আছি।” যানবাহনের সংকটও ভোগান্তি বাড়িয়েছে। বৃষ্টির কারণে গণপরিবহন, রিকশা, সিএনজি এবং বাইক রাইড শেয়ারিং পরিষেবা সীমিত হয়ে গেছে, ফলে দূরত্বে থাকা মানুষের জন্য ঘরে ফেরা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নারীরা বাসে করে ঘরে ফেরা নিয়ে বড় ধরনের অসুবিধায় পড়ছেন।
আজিমপুর বিজিবি ২ নং গেট এলাকায় পানি হাঁটুসমান হয়ে যাওয়ায় কেউ রিকশা, কেউ ভ্যানগাড়িতে যাতায়াত করছেন। নিউমার্কেট ডাকঘর থেকে বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ স্কুল এন্ড কলেজ পর্যন্ত যাতায়াত করতে সাধারণ মানুষকে জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে বর্ষার সময়ে পানি জমে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরাও অসুবিধায় পড়েন। শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম জানান, “সামান্য বৃষ্টিতেই ক্যাম্পাসের মূল ফটক ডুবে যায়, হাঁটার মতো জায়গা থাকে না। আগের দায়িত্বশীলরা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন, এখন আশা করি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সমাধান হবে।”
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে কার্যকর পদক্ষেপ ও দ্রুত পানি নিষ্কাশনে যে ব্যবস্থা নিতে হবে, তা এখনো দেখা যায়নি। সিটি কর্পোরেশনের এক সদস্য জানান, “মার্কেট বন্ধ থাকায় আশা করছি রাতের মধ্যে পানি নেমে যাবে, ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ বর্তমানে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যদিও এটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়নি, তবে ভারি বর্ষণের আশঙ্কা এখনও রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
সারাবছরই বর্ষাকালে ঢাকা শহরের এ ধরনের জলাবদ্ধতার ঘটনা ঘটছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং দ্রুত পদক্ষেপের অভাবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না।
বিজ্ঞাপন