মঙ্গলবার , ০৩ জুন, ২০২৫ | ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৫:৪২ ৩১ মে ২০২৫
এবারের ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দেশে কোরবানির পশুর জোগান চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি হবে বলে জানা গেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) তথ্যমতে, দেশের আট লাখ ৮৭ হাজার ৫৪৪টি খামারে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি পশু। প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে, পশু বিক্রির পরও প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবারের কোরবানিতে পশু বিক্রির সম্ভাব্য আর্থিক মূল্য প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হতে পারে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি পশু, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
সরবরাহে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী বিভাগ। এখানে প্রস্তুত আছে ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯টি পশু, যা মোট সরবরাহের প্রায় ৩৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪টি এবং খুলনা বিভাগে ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৮৭টি পশু। রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনা—এই তিন বিভাগ থেকেই আসবে দেশের মোট কোরবানির পশুর প্রায় ৭০ শতাংশ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, “দেশীয় পশুতেই এবারের কোরবানি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। স্থানীয় খামারিরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উৎপাদন বেড়েছে। ফলে পশু আমদানির প্রয়োজন পড়েনি বললেই চলে। অবৈধ পশু প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর নজরদারি ও সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, মাঠপর্যায়ে কোরবানির পশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পশুর হাটেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সবমিলিয়ে এবারের কোরবানির অর্থনীতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরবানির সময় দেশের মোট চামড়ার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়। এবারও এক কোটি পশুর মতো চামড়া সংগ্রহ হতে পারে, যা চামড়া শিল্পে বড় অবদান রাখবে।
এদিকে, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশে গবাদিপশুর উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার পশুর কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ লাখ ৮১ হাজার গাভি ও বকনা এবং উৎপাদিত বাছুরের সংখ্যা ১৬ লাখ ৯৬ হাজার। এছাড়া ব্রিডিং বুল থেকে উৎপাদিত সিমেনের পরিমাণ ছিল ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার ডোজ।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “সরকারের ধারণার চেয়েও বাস্তব চাহিদা বেশি হতে পারে। ইফেকটিভ চাহিদা বাড়াতে হলে পশুর দাম আরও সহনীয় করতে হবে।”
সবমিলিয়ে, দেশীয় খামারিদের উৎপাদিত পশু দিয়েই এবার ঈদের কোরবানি সম্পন্ন হতে যাচ্ছে এবং কোরবানির পশু নিয়ে কোনো সংকট বা আমদানির প্রয়োজন পড়বে না বলেই আশা করা যাচ্ছে। দেশের পশু খাত ও খামারভিত্তিক অর্থনীতি এবার ঈদে বড় রকমের অবদান রাখবে।
বিজ্ঞাপন