মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেলেন জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেলেন জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৪:৪২ ২৭ মে ২০২৫

বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় একটি বিরল নজির সৃষ্টি হলো আজ। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম, যিনি একসময় যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন, তিনি আজ আপিল বিভাগে খালাস পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালত জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় যথাযথ প্রমাণের অভাবে টিকে থাকেনি।

২০১৪ সালে ট্রাইব্যুনাল আজহারুল ইসলামকে রংপুরে সংঘটিত একাধিক হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। তবে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে চলা আপিল প্রক্রিয়ায় আজকের এই রায় বদলে দিল পুরো চিত্র।

এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। কারণ, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি এই প্রথম আপিল বিভাগে গিয়ে সম্পূর্ণ খালাস পেলেন।

আজহারুল ইসলামের আইনজীবীরা বলছেন, এখন তার মুক্তিতে আর কোনো আইনগত বাধা নেই। তার প্রধান আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “এই রায় আমাদের আইনের প্রতি আস্থা বাড়াবে, কারণ আদালত নিরপেক্ষভাবে প্রমাণ বিশ্লেষণ করে রায় দিয়েছেন।”

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, তারা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে ভাববে। সম্ভব হলে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হতে পারে।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি “ন্যায়বিচারের বিজয়”। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলো এই রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, "যেখানে হাজারো মানুষ নির্যাতিত হয়েছে, সেই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি খালাস পেয়ে গেলে সেটি বিচারব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তোলে।"

আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রংপুরে বিভিন্ন নৃশংস কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ২০১১ সালে গ্রেফতার করা হয় এবং ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়।

কিন্তু আজকের রায়ে আদালত মনে করেছে, এসব অভিযোগ যথেষ্টভাবে প্রমাণিত হয়নি। তাই আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

এই রায় দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার অঙ্গনে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই রায়ের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্যান্য বিচার ও আপিলের উপর কী প্রভাব পড়ে।

বিজ্ঞাপন