প্রীতির পাঞ্জাবকে কাঁদিয়ে শিরোপা উৎসব কোহলিদের

প্রীতির পাঞ্জাবকে কাঁদিয়ে শিরোপা উৎসব কোহলিদের

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৪১ ৩ জুন ২০২৫

১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটল। অবশেষে আইপিএলের ১৮তম আসরে এসে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পেল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। একের পর এক আসরে তারকাবহুল দল গড়েও হতাশাই সঙ্গী ছিল এই ফ্র্যাঞ্চাইজির। তবে এবার আর স্বপ্নভঙ্গের গল্প নয়—আহমেদাবাদে জমজমাট ফাইনালে প্রীতি জিন্তার মালিকানাধীন পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল কোহলিদের দল।

এই ম্যাচটি যেন কোহলির জন্যই লেখা হয়েছিল। ফাইনালের আগে অধিনায়ক রজত পাতিদার স্পষ্টই বলেছিলেন—“আমরা কোহলির জন্য শিরোপা জিততে চাই।” মঙ্গলবার আহমেদাবাদের গ্যালারি যেন এক টুকরো বেঙ্গালুরুতেই রূপ নিয়েছিল। "কোহলি কোহলি" ধ্বনিতে মুখর ছিল পুরো মাঠ। ম্যাচ শেষে যখন ট্রফি হাতে কোহলি দাঁড়ান, তখন তার চোখের কোনে জল—সেই চোখে ছিল আনন্দ, তৃপ্তি আর দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রতীক্ষা শেষ করার শান্তি।

বেঙ্গালুরু প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে তোলে ১৯০ রান। ইনিংসের শুরুতে ফিল সল্টের দ্রুত বিদায় কিছুটা ধাক্কা দিলেও, কোহলি ও আগারওয়ালের জুটি দলকে সামলে তোলে। কোহলি খেলেন ৩৫ বলে ৪৩ রানের পরিণত ইনিংস। এরপর জিতেশ শর্মা ও লিয়াম লিভিংস্টোন দ্রুত কিছু রান যোগ করে দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জায়গায় নিয়ে যান। শেষদিকে শেফার্ডের ৯ বলে ১৭ রান ইনিংসটিকে এনে দেয় বাড়তি গতি।

পাঞ্জাবের হয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন আর্শদীপ সিং ও কাইল জেমিসন, দুজনেই নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচে ফেরার পথ রুদ্ধ করে দেন আর্শদীপ।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাঞ্জাব শুরুটা ভালোই করে। ওপেনার প্রবসিমরান সিং ও প্রিয়ন্স আর্যের জুটিতে আসে ৪৩ রান। তবে এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার মাত্র ১ রান করে বিদায় নেন, যা ছিল দলের জন্য বড় ধাক্কা। ইংলিস ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। নেহাল ওয়াধেরা ছিলেন নিষ্প্রভ, আর মার্কাস স্টয়নিস এক ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলেই আউট হয়ে পাঞ্জাবের ভরাডুবির পথ পরিষ্কার করে দেন।

শেষদিকে শশাঙ্ক সিং একাই লড়াই চালিয়ে যান। ৩০ বলে ৬ ছক্কা ও ৩ চারে ৬১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু একার প্রচেষ্টায় জয় সম্ভব হয়নি। শেষ ওভারে ১৩ রান দরকার হলেও পাঞ্জাব থেমে যায় ১৮৪ রানে।

বেঙ্গালুরুর হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন ক্রুনাল পান্ডিয়া, ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে তুলে নেন ম্যাচ গড়ানো দুটি উইকেট। ভুবনেশ্বর কুমারও নেন ২টি উইকেট।

এই জয়ে কোহলি পেয়েছেন তার বহু কাঙ্ক্ষিত আইপিএল শিরোপা। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই আসরে এর আগে তিনবার ফাইনালে উঠে হারের বেদনা সঙ্গী ছিল বেঙ্গালুরুর। এবার সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। ক্রিকেটবিশ্বের এক অন্যতম জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি দল হিসেবে আরসিবির এই জয় আইপিএলের ইতিহাসে একটি নতুন পালক যোগ করল।

অন্যদিকে, পাঞ্জাব কিংসের হতাশা যেন দীর্ঘায়িতই হচ্ছে। ১৮ বছরেও শিরোপার মুখ দেখেনি তারা। ফাইনালে এসেও সেই শিরোপার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেল প্রীতি জিন্তার দলের সামনে।

শেষ পর্যন্ত এই ফাইনাল ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে শুধুই এক কারণে—বিরাট কোহলির হাতে প্রথমবারের মতো আইপিএল ট্রফি উঠেছে। এই জয় শুধু এক ট্রফি নয়, এটি একটি আবেগ, একটি অপেক্ষার ফসল, একটি ক্রিকেটীয় লেগেন্ডের গৌরবময় মুহূর্ত।

বিজ্ঞাপন