বৃহস্পতিবার , ১৫ মে, ২০২৫ | ১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৫:৩১ ১৫ মে ২০২৫
সাবেক মডেল ও অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপী আবারও আলোচনায়। এক সময় জাতীয় দলের এক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে যিনি শিরোনামে এসেছিলেন, এবার নিজ স্বামী মুফতি তালহা ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। হ্যাপীর দাবি, তার স্বামী এখন পর্যন্ত ৯টি বিয়ে করেছেন এবং এসব বিয়ের অনেকটাই ছিল গোপন, স্বল্পস্থায়ী ও অবৈধ। এ নিয়ে তিনি রাজধানীর একটি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।
হ্যাপীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জান্নাতুল ফেরদৌস বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হ্যাপী শোবিজ জগৎ ছেড়ে দীর্ঘদিন আগে দ্বীনের পথে আসেন। এরপর ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পাঁচ লাখ টাকা মোহরানায় মুফতি তালহা ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তালহা ইসলাম ছিলেন নড়াইলের সাবেক এমপি প্রয়াত মুফতি শহিদুল ইসলামের ছেলে। বিয়ের সময় হ্যাপীর মা সংসারের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কিনতে পাঁচ লাখ টাকা উপহার দেন। তাদের সংসারে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।
তবে সন্তান জন্মের পর থেকেই হ্যাপীর প্রতি স্বামীর আচরণ বদলে যায়। ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন তালহা, নানা অজুহাতে তাকে মারধর করতে শুরু করেন। হ্যাপীর অভিযোগ, তালহা বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং স্বল্প সময়ের জন্য তাদের বিয়ে করে। হ্যাপী বলেন, "তালহা এখন পর্যন্ত ৯টি বিয়ে করেছে। অনেকের সঙ্গে স্বল্পকালীন সম্পর্ক শেষে মৌখিক তালাক দিয়ে সম্পর্ক শেষ করেছে।"
সংবাদ সম্মেলনে তালহা ইসলামের করা নয়টি বিয়ের তালিকাও প্রকাশ করেন হ্যাপী। তার দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, এ পর্যন্ত তালহা ইসলাম যাদের বিয়ে করেছেন তারা হলেন: ১. নাজনীন আক্তার হ্যাপী (বর্তমান স্ত্রী), ২. মারইয়াম (অবিবাহিতা, কাশ্মীর), ৩. তামান্না-১ (অবিবাহিতা, হাজারীবাগ), ৪. হাফসা (ডিভোর্সি, তিন সন্তানসহ, খুলনা), ৫. তাসলিমা (বিধবা, মানিকগঞ্জ), ৬. তামান্না-২ (ডিভোর্সি, উত্তরা), ৭. নুর (বিধবা, দুই সন্তানসহ, চট্টগ্রাম), ৮. খাদিজা (ডিভোর্সি, কেরানীগঞ্জ), ৯. মুশফিকা (ডিভোর্সি, একটি ছেলে সন্তানসহ)।
হ্যাপী অভিযোগ করেন, তিনি বহুবার তালাক চাইলে তালহা তাকে অমানুষিক নির্যাতন করতেন। তালাকের শর্ত হিসেবে এক কোটি টাকা দাবি করতেন বা সন্তানকে আজীবনের জন্য ছেড়ে দেওয়ার মতো কঠিন শর্ত দিতেন। হ্যাপী বলেন, “তালাক চাইলেই মারধর করা হতো। আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে ফেলা হতো।”
হ্যাপীর আরও অভিযোগ, মামলার পর তালহা লোকজন নিয়ে বাসায় এসে প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার ব্যবসায়িক মালামাল নিয়ে গেছেন এবং মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “এতদিন মারধরের ভয়ে চুপ ছিলাম, এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় সবকিছু প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি।”
একইদিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে হ্যাপী লেখেন, “আমিসহ তিনটা বিয়ের কাগজ আছে। বাকিগুলার যেন প্রমাণ না থাকে, টিস্যুর মতো ইউজ করে মৌখিক তালাক দিয়ে সম্পর্ক শেষ করা হয়।” তিনি আরও লেখেন, “আপনি খুলনায় যে মহিলাদের তালাক দিয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রেগন্যান্ট। সেই বাচ্চাকে চার বছরে মাত্র কয়েকবার দেখেছেন, অথচ আমার সন্তানকে নিয়ে আপনি এত টান দেখান কেন? আমি কি সোনার ডিম পাড়া হাঁস?”
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৪ মে হ্যাপী জানতে পারেন তালহা গোপনে আবারও বিয়ে করেছেন। বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞেস করায় তালহা তাকে মারধর করেন। এরপর ১০ মে হ্যাপীর বাসায় গিয়ে তার স্বামী ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন এবং দিতে অস্বীকৃতি জানালে বেধড়ক মারধর করেন ও তালাক দেওয়ার হুমকি দেন।
তালহা ইসলামের বক্তব্য জানতে চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।
বিজ্ঞাপন