Sorry, you have been blocked

You are unable to access thailand-u31.com

Why have I been blocked?

This website is using a security service to protect itself from online attacks. The action you just performed triggered the security solution. There are several actions that could trigger this block including submitting a certain word or phrase, a SQL command or malformed data.

What can I do to resolve this?

You can email the site owner to let them know you were blocked. Please include what you were doing when this page came up and the Cloudflare Ray ID found at the bottom of this page.

তিন গান, এক জীবন: আবদুল জব্বারের কালজয়ী কণ্ঠের গল্প

তিন গান, এক জীবন: আবদুল জব্বারের কালজয়ী কণ্ঠের গল্প

তিন গান, এক জীবন: আবদুল জব্বারের কালজয়ী কণ্ঠের গল্প

বিনোদন প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি.কম
বিনোদন প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৮ ৩০ আগস্ট ২০২৫

স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে গাওয়া তাঁর কণ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল। তাঁর গান শুনে অনেক তরুণ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কালজয়ী শিল্পী আবদুল জব্বারই প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন— “ওরে নীল দরিয়া”। সেই কণ্ঠ আজও আমাদের হৃদয়ে অনুরণিত হয়। তবে এই দরাজ কণ্ঠের মানুষটি চিরবিদায় নিয়েছেন ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট।

জন্ম ও কর্মজীবন

১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আবদুল জব্বার। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৬২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে গান করেন, আর ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী।
১৯৬৪ সালে জহির রায়হানের প্রথম রঙিন ছবি “সংগম”-এ গান করেন তিনি। এরপর “এতটুকু আশা” (১৯৬৮), “পিচঢালা পথ”, “ঢেউয়ের পর ঢেউ”— এসব ছবির গান তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। তবে তাঁর সবচেয়ে পরিচিত গান “ওরে নীল দরিয়া” ১৯৭৮ সালে “সারেং বৌ” ছবিতে ব্যবহার করা হয়।

সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৮০) এবং স্বাধীনতা পদক (১৯৯৬)।

জনপ্রিয় তিনটি গানের গল্প

১. ওরে নীল দরিয়া

আলম খানের সুরে ও মুকুল চৌধুরীর কথায় তৈরি এই গানটি বাংলাদেশের অন্যতম কালজয়ী গান। মূল সুর করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে, কিন্তু ব্যবহার করা হয় ১৯৭৮ সালের “সারেং বৌ” ছবিতে। গানের দৃশ্যে সারেং বাড়ি ফিরছে— ট্রেনে, সাম্পানে ও মেঠোপথে। দৃশ্য অনুযায়ী বাদ্যযন্ত্রে ট্রেন, নৌকা ও পানির শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। গানটি রেকর্ড হয় কাকরাইলের ইপসা স্টুডিওতে, যেখানে একসঙ্গে ২২ জন বাদ্যযন্ত্রী বাজিয়েছিলেন।

২. সালাম সালাম হাজার সালাম

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ফজল-এ-খোদার লেখা এই গানের সুর করেছিলেন আবদুল জব্বার নিজেই। গানটি প্রথম পরিবেশিত হয় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়ে এটি মুক্তিকামী মানুষের প্রাণের গান হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু নিজেও গানটির প্রশংসা করেছিলেন এবং আবদুল জব্বারকে ‘ছেলে’ সম্বোধন করেছিলেন।

৩. তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের লেখা ও সত্য সাহার সুরে “এতটুকু আশা” ছবির গান এটি। আবদুল জব্বারের অন্যতম প্রিয় গান ছিল এটি। তিনি বলেছিলেন, গানটি মঞ্চে গাওয়ার সময় মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না। এমনকি ভারতের কিংবদন্তি শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গানটি শুনে অভিভূত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন— “তুমি বাংলাদেশের জব্বার, তোমার কণ্ঠ অনন্য।”

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

আবদুল জব্বারের কণ্ঠে “জয় বাংলার জয়”, “সালাম সালাম হাজার সালাম”, “মুজিব বাইয়া যাও রে”-এর মতো গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি শিবিরে শিবিরে গিয়ে মুক্তিকামী সেনাদের মনোবল বাড়িয়েছেন।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণসংগীত গেয়ে সংগ্রহ করেছিলেন প্রায় ১২ লাখ রুপি, যা তিনি সম্পূর্ণ দান করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে তিনি ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেছেন।

জীবনের একমাত্র একক অ্যালবাম

২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একমাত্র অ্যালবাম— “কোথায় আমার নীল দরিয়া”। এ নিয়ে তিনি খুব আনন্দিত ছিলেন। অ্যালবামে দেশ, মাটি, মা, সমাজ ও ধর্মের কথা উঠে এসেছিল। প্রথমে নাম ঠিক হয়েছিল “মা আমার মসজিদ আমার”, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রিয় গান ‘নীল দরিয়া’র নামেই অ্যালবামের শিরোনাম রাখা হয়।

জীবনের শেষ দিনগুলো

জীবনের শেষ সময়ে ঢাকায় বেশ নিভৃতেই ছিলেন তিনি। অভিমানও ছিল প্রবল। অসুস্থতা আর আর্থিক টানাপোড়েন তাঁকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। সরকারি অনুদান পেলেও চিকিৎসার খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
হাসপাতালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন—
“আমাকে যখন লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হবে, তখন সবাই আসবেন দেখতে, মারা গেলে শহীদ মিনারে নেবেন। এসব কিছুই আমার দরকার নাই। আমি আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই।”

কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট সকালে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরদিন প্রবল বর্ষণের মাঝেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অগণিত মানুষ তাঁকে শেষ বিদায় জানিয়েছিল। বৃষ্টি আর চোখের পানি মিলেমিশে সেদিন হয়ে উঠেছিল অশ্রুজলে ভেজা বিদায় অনুষ্ঠান।

শেষ কথা

আবদুল জব্বার আর নেই, কিন্তু তাঁর কণ্ঠে অমর হয়ে থাকবে “ওরে নীল দরিয়া”, “সালাম সালাম হাজার সালাম”, আর “তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়”-এর মতো গান। তিনি ছিলেন শুধু একজন শিল্পী নন, ছিলেন প্রেরণার এক নাম, মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদাতা, বাংলার আবেগের প্রতিচ্ছবি।

 

বিজ্ঞাপন

https://moreshopbd.com/