বুধবার , ২৩ জুলাই, ২০২৫ | ৮ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৬:২১ ২২ জুলাই ২০২৫
পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো ট্র্যাকলেস (লাইনবিহীন), টিকিটবিহীন ও সম্পূর্ণ সৌরবিদ্যুৎ চালিত অত্যাধুনিক মেট্রো সার্ভিস। এই মেট্রোটি চলবে কোনো রেললাইন ছাড়াই, সাধারণ সড়কেই—তবে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এটি সাবওয়ের মতোই আধুনিক।
লাহোরে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের নাম সুপার অটোনোমাস রেল র্যাপিড ট্রানজিট (SRT)। এটি মূলত ‘হুইলের ওপর সাবওয়ে’ হিসেবে পরিচিত। কারণ এটি চলাচল করে সাধারণ রাস্তা দিয়ে, কিন্তু সেবা দেয় মেট্রোর মতোই। SRT ব্যবস্থায় কোনো প্রথাগত রেললাইন নেই, বরং ভার্চুয়াল ট্র্যাক ব্যবস্থায় চলে এটি—যেখানে জিপিএস, ডিজিটাল ম্যাপিং ও উন্নত সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
এই পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ও ব্যাটারিচালিত। বর্তমানে এটি পরীক্ষামূলকভাবে লাহোর বিমানবন্দর সংলগ্ন নির্দিষ্ট করিডোরে চলাচল করছে। চীন থেকে আনা এই প্রযুক্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাকিস্তান ও চীনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “এটি কেবল পরীক্ষামূলক ড্রাইভ নয়, বরং আমাদের পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য একটি দিকনির্দেশনা।”
এই প্রকল্পটি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ অনুমোদিত ৫ বছর মেয়াদী পরিবহন মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। তার নেতৃত্বেই প্রদেশজুড়ে অটোমেটেড র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (ART) সিস্টেম চালুর পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। আগামী ৫ বছরে এই প্রযুক্তি ৩০টি শহরে চালু করা হবে।
মরিয়ম নওয়াজ বলেন, “এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং চলাচলের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ। এটি আমাদের শহরগুলোর মধ্যে বৈষম্য দূর করবে এবং সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”
এই ট্র্যাকলেস মেট্রোতে ব্যবহৃত যানবাহনগুলো সাধারণ ট্রেন বা বাসের মতো নয়। এটি মাল্টি-কোচ ইলেকট্রিক বাস, যা প্রতি ফ্লিটে ২৫০-৩০০ যাত্রী বহন করতে পারে। যেহেতু এতে কোনো উঁচু করিডোর বা লাইনের প্রয়োজন নেই, তাই সহজেই ছোট শহরগুলোতেও এই প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
প্রথম ধাপে লাহোর, ফয়সালাবাদ ও গুজরানওয়ালায় চালু করা হবে এই সেবা। পরবর্তী চার বছরে প্রতি ধাপে ১০টি করে শহরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই প্রযুক্তি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রতিটি SRT ফ্লিট প্রায় ১০০টি ব্যক্তিগত গাড়ির বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারবে, ফলে যানজট, শব্দ ও পরিবেশ দূষণ অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। এটি পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে পরীক্ষামূলক চলাচল আরও কয়েক সপ্তাহ চলবে, যেখানে প্রকৌশলীরা পারফরম্যান্স ডেটা ও যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালেই লাহোরে চালু হতে পারে পূর্ণাঙ্গ ট্র্যাকলেস মেট্রো সার্ভিস।
পরবর্তী ধাপে করাচি, ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিসহ অন্যান্য বড় শহরেও এই প্রযুক্তি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন