মাহরিন চৌধুরী: এক শিক্ষিকার আত্মোৎসর্গ ও জিয়া পরিবারের আদর্শ

মাহরিন চৌধুরী: এক শিক্ষিকার আত্মোৎসর্গ ও জিয়া পরিবারের আদর্শ

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৩:২৮ ২৩ জুলাই ২০২৫

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী চৌধুরীপাড়ার কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাহসী শিক্ষক মাহরিন চৌধুরী (৪২)। রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার সময় নিজের জীবন বাজি রেখে যেসব শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেছিলেন, সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে প্রত্যক্ষদর্শীদের।

মাহরিন ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। তাঁর বাবা এমআর চৌধুরী জিয়াউর রহমানের আপন খালাতো ভাই। এই পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই বোঝা যায়, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ ছিল তাঁর রক্তে বহমান। বিএনপি পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি ছিলেন দলের প্রতি আস্থাশীল এবং জাতীয় আদর্শে বিশ্বাসী এক ব্যক্তিত্ব।

২১ জুলাই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আগুনে আচ্ছন্ন ক্লাসরুম থেকে একে একে প্রায় ২০ জন শিশুশিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেন মাহরিন চৌধুরী। তিনি নিজে বের হওয়ার আগেই দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণে পুরো শরীরে আগুন ধরে যায়। দগ্ধ অবস্থায় তাকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে সেখানে আইসিইউতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শরীরের শতভাগ পুড়ে গিয়েছিল।

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে মাহরিন স্বামী মনছুর হেলালের হাত ধরে বলেন, “আমার বাচ্চাদের দেখো… তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না।” স্বামীকে তিনি জানান, বাচ্চারা তার সামনে পুড়ে মরছিল, তিনি কিছুতেই নিজেকে সরাতে পারেননি। এই মমতা ও আত্মত্যাগ একজন আদর্শ শিক্ষকের নয় শুধু, একজন মায়েরও।

পারিবারিক জীবনে মাহরিন ছিলেন দুই পুত্র সন্তানের মা। স্বামী মনছুর হেলাল একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার। দুই সন্তান আয়ান রশীদ ও আদেল রশীদ আজ এতিম হয়ে গেলেও তারা গর্ব করতে পারে, তাদের মা ছিলেন একজন সত্যিকারের বীর। শিক্ষকতা পেশায় মাহরিন ২০০২-০৩ সাল থেকে যুক্ত ছিলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলা মিডিয়াম শাখার কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মাহরিন চৌধুরীর মৃত্যু নিছক একটি দুর্ঘটনা নয় – এটি এক মহীয়সী নারীর আত্মত্যাগের ইতিহাস। তিনি দেখিয়ে গেলেন কীভাবে নিজের জীবনের চেয়েও বড় হতে পারে দায়িত্ব, ভালোবাসা ও মানবিকতা। তাঁর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে – আর জাতি যেন এমন দেশপ্রেমিক সন্তানদের স্মরণে রাখে চিরকাল।

বিজ্ঞাপন