কবর থেকে তুলে পোড়ানো হলো নুরা পাগলার মৃতদেহ—এই অরাজকতার দায় কার?

কবর থেকে তুলে পোড়ানো হলো নুরা পাগলার মৃতদেহ—এই অরাজকতার দায় কার?

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ১১:০৭ ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের এক সময়কার আলোচিত ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব নুরা পাগলার মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ দেশজুড়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করা এই কুখ্যাত ব্যক্তি জীবদ্দশায় ইসলাম ধর্মের মূল শিক্ষার বিপরীতে নানা বিকৃত ও ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করতেন। আল-কোরআনকে ‘ভুজপাতা’ বা মূল্যহীন বলে অবমাননা, মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা এবং ধর্মীয় ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে তার প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরে জমে ছিল। মৃত্যুর পর তার কবরঘটিত কার্যক্রম, অনুসারীদের অদ্ভুত আচরণ এবং ধর্মীয় সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করার কারণে সেই ক্ষোভ অবশেষে বিস্ফোরিত হয়ে কবর থেকে মৃতদেহ তুলে আগুনে পোড়ানোর মতো ভয়ঙ্কর ঘটনায় রূপ নেয়।

নুরা পাগলা মৃত্যুর পূর্বে নিজের কবর কা’বার আদলে নির্মাণ করে ভক্তদের তাওয়াফ করার নির্দেশ দেন, যা তার অনুসারীরা মৃত্যুর পর বাস্তবায়ন করে। এছাড়া, মৃত্যুর পর ছয় তাকবীরের জানাজা পড়া, নিজস্ব কালেমা চালু করা—“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মাহদী রাসুলুল্লাহ” এবং আজানের শব্দ পরিবর্তন করার মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধর্মীয় রীতি ও শাস্তির প্রতি ব্যঙ্গাত্মক আচরণ প্রকাশ পায়। দাফনের সময় মাথা দক্ষিণমুখী ও পা উত্তরমুখী করে কবর দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়, যা স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে বিস্ময় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

গত ২৩ আগস্ট নুরা পাগলার মৃত্যুর পর তার কবরের উপর কাবাঘরের আদলে ঘর নির্মাণ করা হয়। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ চরমে পৌঁছে যায়। স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এই কর্মকাণ্ডকে স্পষ্টভাবে ধর্ম অবমাননা ও ভণ্ডামি হিসেবে দেখেন এবং প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান। কিন্তু প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একপর্যায়ে সাধারণ জনতা তার কবর ভেঙে মৃতদেহ তুলে পোড়ানোর মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটায়, যা সামাজিক ও ধর্মীয় স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই ভয়ঙ্কর অরাজকতার দায় কে নেবে? নুরা পাগলার জীবনকালজুড়ে চলা ভ্রান্ত কর্মকাণ্ড, তার অনুসারীদের অদ্ভুত ও ধর্মবিরোধী আচরণ, নাকি প্রশাসনের উদাসীনতা? বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ম নিয়ে ভণ্ডামি কখনো টেকসই হয় না এবং সাধারণ মানুষের ঈমানি ক্ষোভ একসময় বিস্ফোরিত হয়। তবে আইন হাতে তুলে নেওয়া কোনো সমাধান নয়। এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সমাজে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আইনগত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা কতটা জরুরি, নইলে ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে।

বিজ্ঞাপন